অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান: অপারেশন টেবিলে রোগীকে রেখে পালিয়ে গেলেন ডাক্তার-নার্স

বাংলাদেশে এখন অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশে এখন অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে

একটি ক্লিনিকে মাত্রই সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, এমন এক নারীকে তার সদ্যজাত সন্তানসহ অপারেশন টেবিলেই ফেলে রেখে পালিয়ে গেলেন ডাক্তার-নার্সসহ ক্লিনিকের সবাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় এঘটনা ঘটেছে রবিবার নারায়ণগঞ্জে।

এই ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষের অভিযান হতে পারে এরকম খবর পাওয়ার পর তারা ভেতরে আরও কয়েকজন রোগীসহ বাইরের মুল ফটকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

জরুরী টেলিফোন পেয়ে পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা ঐ ক্লিনিকে গিয়ে এই নারী এবং তার সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান এবং তালাবন্ধ অন্যান্য রোগীদেরকে উদ্ধার করেন।

এই নাটকীয় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মোঃ মইনুল আহসান। বিবিসির কাছে তিনি বর্ণনা করেছেন একটি টেলিফোনে খবর পেয়ে এই ক্লিনিকে গিয়ে তারা কী দেখেছেন।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছিল। তাদের কাছে দুপুর দুটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। তাদের জানানো হয়, একটি ক্লিনিকে অপারেশন টেবিলে রোগীকে রেখে সবাই পালিয়ে গেছে।

ডা. আহসান বলেন, "ঘণ্টা-খানেক আগে ওই নারীর অপারেশন শেষ হয়েছে। গিয়ে দেখি সে তখনো সেখানেই শোয়া আছে। তাকে পোষ্ট অপারেটিভ কেয়ার দেয়ার দরকার ছিল। তার কাটা যায়গাটা সেলাই শেষ হয়েছে। কিন্তু ওভাবে রেখেই চলে গেছে। বিষয়টা খুবই বিপজ্জনক, কারণ সিজারিয়ানের রোগীকে অন্তত ২৪ ঘণ্টা পোষ্ট অপারেটিভ কেয়ার দিতে হয়। কিছুক্ষণ পরপর পালস, প্রেশার, অক্সিজেন দেখা লাগে। মায়ের কাটা যায়গা ভাল আছে কিনা, বাচ্চা পেশাব পায়খানা করলো কিনা সেটা এক ঘণ্টা পরপর চেক করতে হয়।"

আরও পড়ুন:

রোগীকে ফেলে রেখে ক্লিনিকের ডাক্তার-নার্স সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন (প্রতীকী ছবি)

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, রোগীকে ফেলে রেখে ক্লিনিকের ডাক্তার-নার্স সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন (প্রতীকী ছবি)

বাংলাদেশে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অভিযান চলাকালীন এমন ঘটনা ঘটলো। ডা. আহসান জানিয়েছেন তার কাছে খবর আসার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক ও নার্স প্রেরণ করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর কয়েকজনের আত্মীয়সহ ভেতরে সবাইকে আতঙ্কিত অবস্থায় পাওয়া যায়।

উদ্ধারকৃত নারী ও শিশুকে নিকটবর্তী মাতুয়াইলে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। মা ও নবজাতক দুজনেই ভাল আছেন। অন্য রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকার সিভিল সার্জন আরও জানিয়েছেন, "হাসপাতালটির পক্ষ থেকে এমনকি কোন ধরনের কাগজপত্রের জন্য আবেদনই করা হয়নি। তারা বাইরে একটা নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে যে সংস্কার কাজের জন্য হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারা ওভাবেই ভেতরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সম্ভবত খবর পেয়েছে যে অভিযান চালানোর জন্য টিম কাছেই আছে তখন তারা পালিয়ে গেছে।"

ডা. আহসান বলছেন, "আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে রোগী রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখেছি কিন্তু কেবল অপারেশন হয়েছে এমন রোগীকে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম দেখলাম।"