ব্যাংকে কমছে প্রবাসী আয়, চাঙা বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় প্রতি রিঙ্গিতের বিপরীতে বাংলাদেশের ২০ টাকা ৩৫ পয়সা দাম দিয়ে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী, বেসরকারি খাতের সিটি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জগুলো। এতে প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ৮৯ টাকা, যা বাংলাদেশ ব্যাংক–নির্ধারিত ডলারের দামের সঙ্গে মিল রয়েছে।

তবে বৈশ্বিক অর্থ স্থানান্তর কোম্পানি মানিগ্রাম মালয়েশিয়ায় রিঙ্গিত সংগ্রহ করেছে ২১ টাকা ৭২ পয়সা দরে ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন সংগ্রহ করেছে ২০ টাকা ৫১ পয়সা দরে। আর মালয়েশিয়ায় হুন্ডিতে প্রতি রিঙ্গিতের বিপরীতে দেওয়া হয়েছে ২২ টাকা ৩৫ পয়সা, যা বাংলাদেশ ব্যাংক–নির্ধারিত দরের চেয়ে ২ টাকা পর্যন্ত বেশি। এটা গতকাল সোমবারের চিত্র। মালয়েশিয়ায় কর্মরত একাধিক প্রবাসী এ তথ্য জানিয়েছেন।

আগে ব্যাংকগুলো যে দামে প্রবাসী আয় আনত, তাতে প্রতি ডলারের দাম পড়ত ৯৬-৯৭ টাকা। ডলারের নতুন দামের ফলে ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো গতকাল যেকোনো সময়ের তুলনায় কম প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। এতে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ছিল একরকম ফাঁকা। আর বৈশ্বিক অর্থ স্থানান্তর কোম্পানি ও হুন্ডিওয়ালাদের কাছে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীদের ভিড় ছিল। হুন্ডিওয়ালাদের টাকা অবৈধ পথে আসতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের কাছে এত দরে ডলার কি কিনবে কোনো ব্যাংক।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো একরকম চাপ দিয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করার চেষ্টা করছে। আবার দাম বাড়বে, এ জন্য অনেক ব্যাংক কিছুটা বেশি দামেও ডলার মজুত করে রাখছে। কারণ, এতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

এদিকে মেমোরিয়াল দিবসের কারণে গতকাল সোমবার আমেরিকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। আর রোববার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে গত দুই দিনে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি। কারণ, সব দেশের প্রবাসী আয় ব্যাংকগুলোর নিউইয়র্কের হিসাবে ডলারে জমা হয়। আর কিছু আয় জমা হয় ইউরো মুদ্রায়।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই যদি এক দামে প্রবাসী আয় আনে তাহলেই সংকটের সমাধান হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করলে সবাই এটা মানবে। সুদের হার বেঁধে দিয়ে যদি প্রজ্ঞাপন জারি হয়, তাহলে টাকা-ডলার বিনিময় হারের বেলায় কেন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে না। প্রজ্ঞাপন দিলে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সেই দাম মেনে নেবে। তারা এখন বেশি দামে ডলার বিক্রির চেষ্টা করছে।’

ডলার–সংকট কাটাতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) নেতাদের সঙ্গে এক সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রোববার দুপুরে বাফেডার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান প্রধান ও এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এক চিঠি দেন। এরপর রোববার সন্ধ্যায় ডলারের দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতে আন্তব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রিতে ডলারের দাম ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলারের সরবরাহ না থাকলে এই দামে লেনদেন হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ জন্য দাম বাড়ানোর পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এতে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংক ও খোলাবাজারে বেড়ে গেছে ডলারের দাম। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ধরে রাখার চেষ্টা করছে।