‘টিপ মারা’ মুজিবুলের বিরুদ্ধে এখনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়নি

বক্তব্য দিচ্ছেন চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশ্যে নির্বাচন প্রভাবিত করার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে ‘ধীরে চলো নীতি’তে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। ভোটকেন্দ্রে আঙুলের টিপ দেওয়ার জন্য নিজের লোক রাখার প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেও কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া কার্যত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মুজিবুল হক বলেছেন, ‘তোমার আঙুল, টিপ দেব আমি।’

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয় বলছে, আজকালের মধ্যে মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত আসবে কমিশন থেকে। প্রথম বক্তব্যের তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে দেরি হওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত আসতে দেরি হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।

জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসন ও এসপি কার্যালয় থেকে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল, তা কমিশনে পেতে কিছুটা দেরি হয়েছে। সে কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।

আগামীকাল রোববার বা আগামী সোমবারের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর মধ্যে তাঁর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এটাও কমিশনের নজরে দেওয়া হয়েছে।
১৫ জুন বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মুজিবুল হক চৌধুরী গত ২৮ মে ওই নির্বাচনের এক নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে বলেন, ‘বাটন টিপ দিতে কেন্দ্রে আমার লোক থাকেব।’ এই বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন থেকে তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি জবাবও দিয়েছেন নোটিশের। এরপর ইসি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। এ ছাড়া স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়কেও তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে বলা হয়।

আরও পড়ুন

এই প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুজিবুল হক আবারও বলেন, ‘তোমার আঙুল, টিপ দেব আমি, ওটাই সুষ্ঠু ভোট।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আলম বলেন, ‘প্রথম ঘটনা তদন্ত করে আমরা আমাদের বক্তব্য কমিশনে পাঠিয়েছি। মুজিবুল হকও কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছেন। পরের ঘটনাটিও কমিশনে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রকাশ্যে যেই কথাগুলো বলেছেন, ওই পরিস্থিতি বিদ্যমান। অতীতের নির্বাচন অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এটা বলেছেন। বাস্তব চেহারাটা তুলে ধরেছেন। সরকারি দলের মনোনয়ন পাওয়া মানে জিতে যাওয়া। এই অহংবোধ থেকে এটা বলেছেন তিনি।

আখতার কবির চৌধুরী আরও বলেন, এই ধরনের বক্তব্য আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন। তাঁর প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে। কিন্তু সরকারি দলের প্রার্থী বলেই তিনি ছাড় পাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনকে অসহায় মনে হচ্ছে। এটা নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। যদি শাস্তি না পান, সামনে আরও অনেক প্রার্থী এ রকম হুমকি দেওয়া শুরু করবেন।