ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এত নোংরামি কোনো দিন দেখিওনি, আর দেখার ইচ্ছাও নেই: ডিপজল

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা–জায়েদ প্যানেলের সবার ওপরে
ছবি: ফেসবুক

ওমর সানী তাঁকে ‘মুরব্বি’ বলে সম্বোধন করেন। জায়েদ তাঁকে ‘গুরু’ মানেন। নির্বাচনের মাঠে গুরুত্বের বিবেচনায় তিনি ছিলেন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা–জায়েদ প্যানেলের সবার ওপরে। সিনিয়র এই মুরব্বিখ্যাত খল অভিনেতার নাম মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বর্তমানে এই অভিনেতা মনঃক্ষুণ্ন। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্রের শিল্পীদের ঘিরে অনেক রকম নোংরামি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এসব ঘটনায় চলচ্চিত্র অঙ্গনে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। তিনি চলচ্চিত্র থেকে বিদায়ের কথা বললেন।

একটি অনুষ্ঠানে জায়েদ খানের সেলফিতে ওমর সানী ও ডিপজল
ছবি: ফেসবুক

সম্প্রতি মৌসুমীকে হয়রানির অভিযোগ আনেন ওমর সানী। এর প্রতিবাদে ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে সানী ও জায়েদের কথা-কাটাকাটি হয়। ওমর সানী জায়েদকে চড় মারলে জায়েদ তাঁকে পিস্তল বের করে গুলি করতে চান। এই ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। শিল্পী হিসেবে অনেককে এই ঘটনা মর্মাহত করেছে। ডিপজল বলেন, ‘শিল্পীদের আর ভাবমূর্তি বলে কিছু নাই-ই। ওই এক নির্বাচনে ধ্বংস হয়ে গেছে ৯৯ ভাগ। এক পারসেন্ট বাকি ছিল, সেটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে আর কিছু বলার নেই।

আমার বোধ হয় আর দুই-তিনটা ছবির গল্প আছে। ছবিগুলো শেষ করার পর চলচ্চিত্রকে বিদায় জানাব ভাবছি। ভেবেছিলাম মরণের আগের দিন পর্যন্ত সিনেমা বানিয়ে যাব, ফিল্মের পাশে থাকব, অভিনয় করে যাব, তা আর মনে হয় হচ্ছে না। আর বড়জোর তিনটা ছবি করতে পারি, এরপরে সিনেমাকে গুডবাই। কারণ, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এত নোংরামি কোনো দিন দেখিওনি আর দেখার ইচ্ছাও নেই।’

একটি খাবার টেবিলে ডিপজল, রুবেল, ওমর সানী, জায়েদ, অরুণা বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা
ছবি: ফেসবুক

‘একসময় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য সিনেমা বানিয়েছি, কোনো দিন লাভের কথা ভাবিনি, চেষ্টা করেছি সিনেমা যেন ভালো জায়গায় থাকে। কিন্তু সেই চেষ্টার কোনো মূল্যায়ন পেলাম না,’ বলেন ডিপজল। তিনি মনে করেন, দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসে চক্রান্ত হচ্ছে। বাণিজ্যিক সিনেমার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা বা এফডিসিকে বাঁচানোর কেউ চেষ্টা করছেন না। এই সময় তিনি আরও বলেন, ‘এখন শিল্পী সমিতিতে কে চেয়ারে বসবে, কে ক্ষমতা দেখাবে, এই নিয়ে মারামারি হয়। কিন্তু শিল্পী সমিতি টিকবে কী দিয়ে। ছবি না থাকলে না খেয়ে শিল্পী সমিতির অফিসে বসে থেকে লাভ কী। সিনেমা কেউ বানানোর ঘোষণা দিচ্ছে না। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হোক, এটা কোনো একটা পক্ষ চাইছে। হয়তো অন্য দেশ থেকে বাইজড হয়ে কেউ কাজ করছে, নয়তো আমাদের মধ্যে কেউ চক্রান্ত করছে। আমার জানা নেই। তারা চাইছে, শিল্পী যারা আছে, তাদের বিদায় করে দিতে। এখন এফডিসিতে মার্কেট করছে। পুরো জায়গাটাতেই মার্কেট বানিয়ে দিক। ফিল্ম বন্ধ হয়ে যাক। শিল্পীরা অন্য লাইনে চলে যাক।’

সিনেমা ছাড়তে চান মনোয়ার হোসেন ডিপজল
ছবি: ফেসবুক

এই সময় দুঃখ প্রকাশ করে ডিপজল বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল মরণের আগপর্যন্ত ছবি নিয়ে থাকব। অভিনয় করে যাব, দর্শকের হাসিখুশি দেখব। সেটা মনে হচ্ছে আর হলো না। আমারও ইচ্ছা ওঠে গেছে, মনমানসিকতাও নেই, নিজেও অসুস্থ, ভেবেছিলাম ফিল্মের চাকা ঘোরাব। কিন্তু এত নোংরামি ঢুকছে, যা অকল্পনীয়। ইন্ডাস্ট্রি শেষ হয়ে গেছে। ফেরানোর পথ নেই। আমরা দুই-চার কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা বানিয়েছি। এখন কমার্শিয়াল সিনেমা হচ্ছে ২০/২৫ লাখ টাকায়। আমাদের আগের বাজেটে এখন ১২টি সিনেমা বানানো যায়। আমরা এখন নাটকের পর্যায়ে চলে গেছি। আমি থাকি বা না থাকি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভালো চাই।’