এডিটার'স মেইলবক্স: সীতাকুণ্ডের আগুন আর নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে আলোচনা
চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ আর ভারতে দুটো ভিন্ন ধরনের খবর মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু। অন্যদিকে ইসলামের নবীকে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্য, যা মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে আরব বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় সৃষ্টি করেছে।
আজ এই দুটো ঘটনা নিয়েই পুরো অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। শুরু করছি সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড দিয়ে, প্রথমে লিখেছেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মোহাম্মদ মাসুদুল হক:
''কী লিখবো? যেন লেখার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বিবিসিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে যখন দেখলাম, জন সাধারণের পাশাপাশি ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যুর কথা, তখন মনে পড়ে গেলো সেই সব নীতি নির্ধারক আর অগ্নি নির্বাপক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথা।
''যাদের নীতির আড়ালে স্মৃতির ফ্রেমে আজো কি ভেসে আসে না, তাজরীন গার্মেন্টস, রানা প্লাজা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের অনেক অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্রগুলো। সেই স্মৃতি মুছতে না মুছতেই আরেকটি দৃশ্যের সূত্রপাত।
''আর কত মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারির বিনিময়ে বন্ধ হবে, ঐসব লোভী মালিক আর সরকারি অধিদপ্তরের বিবেকহীন মানুষ নামক প্রাণীগুলোর জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকা?''
খুবই শক্ত কথা বলেছেন মি. হক। তবে আপনার কথার সারমর্মর সাথে সবাই একমত হবেন, কারণ শিল্প-কারখানা নিরাপদ রাখার দায়িত্ব যাদের, তারা যদি ঘুমিয়ে থাকেন, তারা যদি নিষ্ঠার সাথে নিয়ম-কানুন প্রয়োগ না করেন, তাহলে সীতাকুণ্ড বা ঢাকার নিমতলীর মত বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে।
পরের চিঠি লিখেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থেকে মোহাম্মদ ফরিদুল হক:
''চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঘটনাটি আমাকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। আমার মনে হয়েছে এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি সম্পূর্ণ ডিপো মালিকের গাফিলতির পরিণতি। আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়নি সেখানে রাসায়নিক দাহ্য বস্তু আছে।
''বলা হয়েছে শুধু রপ্তানিযোগ্য পোশাক আছে। যার ফলে প্রশিক্ষণ পাওয়া ফায়ার ফাইটারদেরও প্রাণ দিতে হয়েছিল। বিভিন্ন বড় বড় দুর্ঘটনার সময় কারখানার মালিকদের আশে-পাশে কোথাও দেখা যায় না।
''এমনকি তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার মনোভবও থাকে না। যার ফলে অনেক বেগ পেতে হয় সেই দুর্ঘটনাগুলো সমাধানে। তবে কি তারা দুর্ঘটনাগুলো দূর করতে আগ্রহী নয়? না কি দুর্ঘটনার বিষয়ে তারা উদাসীন?''
সেটা একটা বড় প্রশ্ন মি. হক। আমরা গার্মেন্টস শিল্পে দেখলাম তাজরীন এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরও মালিক পক্ষ নিজ উদ্যোগে তাদের কর্মস্থল নিরাপদ করতে খুব একটা তৎপর হননি। তবে ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের চাপে পড়ে তাদের নানা ধরনের সংস্কার করতে হয়েছে।
সীতাকুণ্ডর ঘটনা প্রমাণ করলো, মালিকপক্ষ যদি নিজ থেকে এগিয়ে না আসে তাহলে এ'ধরনের দুর্ঘটনা থামানো কঠিন হবে। আর মালিক পক্ষ এগিয়ে না আসলে সরকারকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরো লিখেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে মোহাম্মদ নুরুল্লাহ:
''একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি সবার মতই দায়ী করবো বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষকে। তাদের কোন ভুল বা গাফিলতির কারণে এত তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গিয়েছে। মিডিয়াতে বলা হচ্ছে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সম্পর্কে কোন কিছু জানানো হয়নি এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানতে চেয়েছেন কোন কেমিক্যাল আছে কি না?
''কিন্তু আমি ফেসবুকে ভিডিওতে দেখছিলাম, একজন আহত ব্যক্তি বলছিল যখন আগুনের সূত্রপাত হয় তখন ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে জানানো হয় যে বিএম ডিপোতে আগুন লেগেছে এবং তিনি বলছেন এখানে পারঅক্সাইড নামে কেমিক্যাল আছে, বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে।
''তাহলে কোনটা বিশ্বাস করবো? এখন তদন্তের দিকে তাকিয়ে আছি তদন্তে কী বেরিয়ে আসে।''
আপনি ঠিকই বলেছেন মি. নুরুল্লাহ, এখনো অনেক বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। অনেকেই অনেক কিছু দাবি করবে। তবে আশা করা যায় যে, তদন্তকারী দল সব ভিডিও ফুটেজ, অডিও টেপ দেখে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার সত্যতা যাচাই করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।
তবে, যেসব রাসায়নিক দ্রব্যর কারণে এই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ হল, সেই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সেখানে রাখার অনুমতি কন্টেইনার মালিক বা ডিপো কর্তৃপক্ষের ছিল কি না, সেটা বের করা তো কঠিন কাজ হবার কথা না।
এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে 'সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন' বেছে নিন।
End of YouTube post, 1
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রচুর প্রাণহানি হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত মানুষের মৃত্যু কি এড়ানো যেত? সেকথাই বলছেন যশোরের ঝিকরগাছা থেকে মনিরুল হক রনি:
''আমাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এখনো অনেকটা সেকেলে। অগ্নি নির্বাপণের আধুনিক ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদির অভাবে অগ্নি দুর্ঘটনাগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
''আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, স্যাটেলাইটের মত বড় বড় প্রকল্প সফল করে আত্মশ্লাঘায় পঞ্চমুখ। অথচ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ফায়ার কর্মী তৈরি এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে আমরা এখনো যথেষ্ট পিছিয়ে।
''আমার প্রশ্ন হল অগ্নি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন অতি জরুরি নয় কি?''
আপনার প্রশ্নের শুধু একটিই উত্তর থাকতে পারে মি. হক, আর তা হল - হ্যাঁ। আধুনিক, প্রশিক্ষিত দমকল বাহিনী যে কোন দেশের জন্য অপরিহার্য। তবে একই সাথে, আগুন যাতে না লাগে, সেজন্য যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা উচিত, বিশেষ করে যেসব কল-কারখানা বা গুদামঘরে দাহ্য দ্রব্য ব্যবহার বা মজুদ রাখা হয়।
সীতাকুণ্ডের বিষয়ে ফিরবো আরেকটু পরে। তার আগে ইসলামের নবীকে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে কয়েকটি চিঠি। প্রথমে লিখেছেন সাতক্ষীরার প্রসাদপুর থেকে শামীমা আক্তার লিপি:
'' ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে নূপুর শর্মা একজন রাজনীতিক। কারণ, রাজনীতিকরা সাধারণত একটু হলেও অন্যদের চেয়ে সচেতন হয়ে থাকেন।
''অথচ মুসলিম উম্মাহর প্রাণের মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে এই অথর্ব রাজনীতিক নেট দুনিয়ায় আজ ভাইরাল। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে মুসলিম দুনিয়ায়।
''আমার বক্তব্য, এরা কি কোনদিন মানুষ হবে না, হিতাহিত জ্ঞান কি হবে না, পরিবেশ ও পরিস্থিতি জ্ঞান কি হবে না? শান্ত দুনিয়া কি অশান্ত করাই এদের লক্ষ্য?''
ভাল প্রশ্ন করেছেন মিস আক্তার। নূপুর শর্মা নিশ্চয়ই জানেন তার মন্তব্য ভারতের মুসলমানদের মাঝে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তিনি সেটার তোয়াক্কা করেননি। হয়তো, দেশের ভেতরে মুসলমানদের অস্বস্তিতে ফেলা, এমনকি খেপিয়ে দেয়াটাও মিস শর্মা নিজের একটা বড় কৃতিত্ব হিসেবে দেখেছেন।
কিন্তু তিনি যেটা আঁচ করতে পারেন নি, সেটা হল উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া। তার অংকের ভুল ছিল সেখানেই।
আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মোহাম্মদ আজিজুল হাকিম রাকিব:
''এ ধরনের ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্যের খবর আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পরও নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরব দেশগুলো নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে শুরু করেছে। এর প্রেক্ষিতে নূপুর শর্মাকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়।
''এর পূর্বেও প্রায়শই ভারতীয় বিজেপি পন্থীদের বিভিন্ন সময়ের মন্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বিজেপি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং বিজেপির আচরণ দেখে মনে হয়েছে তারা ইসলাম বিদ্বেষকে সবসময় উৎসাহিত করেছে।
''তবে কি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক চাপ এবং বয়কটের মুখে পড়ে ভারত ইসলাম বিদ্বেষী নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলো?''
আমারও তো তাই মনে হয় মি. হাকিম। ভারতে সাত-আট বছর ধরে মুসলমানরা নানা ভাবে চাপ এবং বৈষম্যের মধ্যে আছেন। এমনকি বেশ কয়েকজন মুসলমানকে গরুর মাংস রাখার সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিম নিজ দেশের নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে দিন যাপন করছেন।
কিন্তু বহির্বিশ্ব এগুলো নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। বিজেপিও মনে করেছে তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় অন্য দেশের সাথে সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু এবার সবাইকে একরকম অবাক করে দিয়ে কাতারের মত ক্ষুদ্র দেশ প্রথমে প্রতিবাদ করে। তার সাথে যোগ হয় অন্যান্য আরব এবং মুসলিম দেশ। সেকারণেই বিজেপি নূপুর শর্মাকে বলির পাঁঠা বানালো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর ফলে ভারতের রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান ইসলাম বিদ্বেষ কি থামবে? কারণ বিষয়টা তো শুধু নূপুর শর্মার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, যেকথা বলছেন ভোলার চরফ্যাশন থেকে মোহাম্মদ মাসুদুল হক মাশুক:
''এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য শুধু মিস শর্মাই করেনি। বরং, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা আরও বহু বিজেপি ও তাদের ভাবাদর্শ সংগঠন আরএসএস এর রাজনৈতিক কর্মীরাও হরহামেশাই করে যাচ্ছে। বিজেপি সরকার এখন বুঝতে শুধু করেছে ভারত কেবল নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বহির্বিশ্বেও তাদের একটি বিশাল পরিচিতি ও প্রয়োজন আছে।
''এজন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য বিজেপিকে এ ধরনের অসহিষ্ণু ঘৃণাসূচক রাজনীতির চর্চা এখনই বন্ধ করা উচিৎ। অন্যথায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেভাবে ভারতের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে যদি তাদের জনশক্তি ফেরত পাঠাতে শুরু করে, তখন ভারতকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।''
আপনি ঠিকই বলেছেন মি. হক। মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার ধারাবাহিকতায় যদি ভারতের জনশক্তি আমদানিও বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিজেপি সরকারের প্রতি সেটা হবে বড় মাপের আঘাত। নরেন্দ্র মোদী আরব বিশ্বে ভারতের ঐতিহাসিক প্রভাব হারাতে চাইবেন না।
কিন্তু সেই প্রভাব ধরে রাখতে গেলে তাকে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনেক সংযত হতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ভারত কূটনীতিতে অনেক দক্ষ, অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী, কাজেই তারা অনেক ঝড়-ঝাপটাই সামাল দিতে সক্ষম।
এ বিষয়ে আরো লিখেছেন লালমনিরহাটের গুড়িয়াদহ থেকে আহসান হাবিব রাজু:
''ধর্ম নিয়া রাজনীতি কখনোই কাম্য নয়। আধুনিক যুগে এসে আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছি। প্রতিটা ধর্ম শ্রদ্ধার জায়গায় থাকবে। কিন্তু ২০২২ সালে এসে আমরা দেখছি, অন্য ধর্মের প্রতি মানুষের হিংস্রতা বেড়েই চলছে। যা ভবিষ্যতে আমাদের ধ্বংস হবার জন্য দায়ী থাকবে।
''কখনোই সমাজে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে টার্গেট করা উচিত নয়, হোক সে হিন্দু বা মুসলমান। প্রতিটা মানুষ আমাদের সমাজেরই একটা অংশ।''
আপনি ন্যায়-নীতির কথা বলছেন মি. হাবিব। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, ২০২২ সালে এসে দেখা যাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন পরিচয়, যেমন জাতিগত, ধর্মীয়, বর্ণ-ভিত্তিক, এমনকি যৌনতার পরিচয় দিয়েও সমাজে বিবাদ-বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এই বিভেদ ধর্ম-ভিত্তিক এবং রাজনৈতিক কারণে এই বিভেদকে বিভিন্ন মহল লালন করছে। এর পরিণাম যে ভাল হবে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে 'সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন' বেছে নিন।
End of YouTube post, 2
আবার ফিরছি সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে। এবারে লিখেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এর ভোলাহাট থেকে মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম মিঞা:
''জানা গেলো ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ২৪ টি কন্টেইনার রপ্তানির জন্য রাখা হয়েছিল, যা রাসায়নিক পদার্থ। এই ডিপোতে কোন রাসায়নিক পদার্থ মজুদের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি বা লাইসেন্স ছিল না।
বাংলাদেশে এর আগেও রানা প্লাজা,তাজরীন ফ্যাশন ও চুরিহাট্টাসহ অনেক বড় বড় দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক ও সঠিক বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি বলে দেশে একের পর এক বড় বড়দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছ।''
এ'ধরনের দুর্ঘটনা হলেই বিচারহীনতার বিষয়টি সবার মনে আসে। কিন্তু শত প্রতিবাদ-মতামত সত্ত্বেও কেন বিচার হয় না, বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন নেয়া হয় না, তা একটি রহস্যই রয়ে যাচ্ছে। হয়তো এটা রহস্য না।
যেখানে সরকারি দফতরের গাফিলতি থাকতে পারে, আর মালিক পক্ষের রাজনৈতিক প্রভাব থাকে, সেখানে বিচার হওয়াটাই হবে অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেই অস্বাভাবিক ঘটনা যেদিন স্বাভাবিক, নিয়ম-মাফিক হয়ে যাবে, সেদিনই বুঝবো বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিষয়ে আরো লিখেছেন সাতক্ষীরার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গাজী মোমিন উদ্দিন:
''একটি পেট্রোল পাম্প করতে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস,বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন আবশ্যক। আর কন্টেইনার ডিপো করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগেরই অনুমোদন অবশ্যই আবশ্যক।
''সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সীতাকুণ্ডে অবস্থিত কন্টেইনার ডিপোর বিস্ফোরণ এবং অগ্নি নির্বাপণ কাজে নিহত ও আহতদের জন্য দায়ী। এটা হত্যাকাণ্ড।''
এই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলা ঠিক হবে কি না, তা জানি না মি. মোমিন উদ্দিন, তবে এ'কথা ঠিক যে এখানে গাফিলতি ছিল। বিভিন্ন পর্যায়ে গাফিলতি ছিল, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এবং এই গাফিলতির জন্য কারা দায়ী তা তদন্ত করে বের করে বিচারের ব্যবস্থা অবশ্যই করা উচিত।
দোষ এবং দোষী প্রসঙ্গে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান:
''তদারকি সংস্থাগুলোর নাকের ডগায় এরকম একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর এখন তদারকি সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসেছে এবং বিস্ফোরণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি সংস্থাগুলো দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।
''সবাই ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ঘটনার পরও হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হবে এবং কিছুদিন পর আর কেউই খবর রাখবে না। এভাবেই দোষীরা পার পেয়ে যায়।''
তদন্ত কমিটি তো গঠন করতেই হবে, তবে তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে কি না, সেটা একটি প্রশ্ন। দ্বিতীয় বিষয় হল, পুলিশের তদন্ত কতটুকু প্রভাবমুক্ত থাকবে? কারণ পুলিশের তদন্তের ওপরই নির্ভর করবে কাকে দায়ী করে বিচারের মুখে দাঁড় করানো হবে।
সেখানে যদি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা ডিপোর কর্তৃপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্ত হয়ে যায়, তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানোর পথ আগের মত বন্ধই থেকে যাবে।
এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:
মোহাম্মদ মিলন খন্দকার খালেক, পীরগাছা, রংপুর।
কাজী সাঈদ, ঝিনাইদহ।
ফয়সাল আহমেদ সিপন, ঘোড়াদাইড়, গোপালগঞ্জ।
দীপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।
মোহাম্মদ সুমন আকন্দ, পীরগাছা, রংপুর।
আরিফ ইসলাম, পাইকগাছা, খুলনা।
আলী আহম্মেদ, সাপাহার, নওগাঁ ।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পী, কপিলমুনি, খুলনা।
পলাশ চন্দ্র রায়, মারেয়া, পঞ্চগড়।
মুকুল সরদার, দাকোপ, খুলনা।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন মিলন মুকছুদি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।