ইকবাল হোসেন: কুমিল্লায় হিন্দু মন্দিরে কোরআন রাখার মূল সন্দেহভাজন রিমান্ডে

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইকবাল হোসেনকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ওই ঘটনায় আগে গ্রেপ্তার করা তিনজনকেও সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ইকবাল হোসেনকে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ''কোরআন অবমাননা মামলায় ইকবালসহ মোট চারজনকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বাকি চারজন হলেন ফয়সাল, হুমায়ুন ও ইকরাম।''
''এর পেছনে কারা জড়িত, আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। সেজন্য একটু সময় লাগবে। আমরা সবকিছুই খতিয়ে দেখছি,'' তিনি বলেন।
ইকবাল হোসেন বা অপর তিনজনের পক্ষে আদালতে কোন আইনজীবী ছিলেন না।
বাকি তিনজনের মধ্যে ইকরাম হোসেন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদ স্থানীয় একটি মাজারের খাদেম, যেখানকার মসজিদ থেকে কোরআন চুরির আগে ইকবাল হোসেনকে কথা বলতে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ছবির উৎস, RATAN SARKER
পীরগঞ্জে হামলার 'নেতৃত্ব ও উসকানিদাতা' আটক
এদিকে র্যাব দুজন ব্যক্তিকে আটক করে বলছে, তারা রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার "নেতৃত্ব ও উসকানি" দিয়েছে।
সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলাম নামে এই দুই ব্যক্তিকে শুক্রবার রাতে ঢাকার কাছে টঙ্গি থেকে আটক করা হয়।
শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেনন, ''সৈকত মণ্ডল আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে আসছিল। কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই সে নানারকম উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছে।''
''হামলার পেছনে গুজব ছড়াতে সে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। রবিউল ইসলাম তার এসব বক্তব্য প্রচারে সহযোগিতা করেছে,'' বলছেন মি. মঈন।
মি. মঈন আরো বলেন, আটক হওয়া সৈকত মণ্ডল ''যে গ্রামে আগুন দেয়া হয়, সেই গ্রামের পাশের মসজিদে গিয়ে মাইকিং করে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দেয় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সবাইকে জড়ো হতে বলে। পরবর্তীতে সে একজন আত্মীয়কে দায়িত্ব দেয় মাইকিং করার জন্য। সেই গ্রামের একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে সবাইকে (হামলায়) নেতৃত্ব দেয়।''
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া র্যাবের এসব বক্তব্য অবশ্য বিবিসির তরফ থেকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

গত ১৭ই অক্টোবর হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজন তরুণ ফেসবুকে একটি পোষ্টে 'ইসলাম বিদ্বেষী' কমেন্ট করার কথিত অভিযোগে পীরগঞ্জে ১৮টির মতো ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
ওই ঘটনার পর রংপুরে দু'টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় অন্তত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই হামলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এসব হামলা করা হয়েছে।
এরপর আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুপল্লীতে হামলার আগে উগ্রপন্থীদের উত্তেজিত করার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। সেই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
যে ব্যক্তির পোস্টের জের ধরে পীরগঞ্জের হিন্দু পল্লীতে হামলা হয়, সেই পরিতোষ সরকারকেও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সপ্তাহখানেক ধরে যেসব হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, পীরগঞ্জের গ্রামে হামলা ও জেলেদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছিল তার মধ্যে সাম্প্রতিকতম।
এর আগে ১৩ই অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন কুমিল্লা শহরে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর সেখানে পূজামণ্ডপে হামলা হয়।
এরপর টানা তিনদিন নোয়াখালী, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। পীরগঞ্জের আগে সর্বশেষ শনিবার ফেনীতে সংঘর্ষ হয়েছে।
এসব ঘটনায় সারাদেশে ৭১টি মামলা হয়েছে এবং ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।