মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গাজীপুরের ইসলামপুর এলাকায় নির্মাণাধীন আটতলা ভবনটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছর আগে নির্মাণকাজ শুরুর পর সিংহভাগ কাজ শেষ হলেও ভবনটি অরক্ষিত পড়ে আছে। সেখানে ঠিকানা গেড়েছেন মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১৫ সালে গাজীপুর মহানগরের ইসলামপুর এলাকায় নারী উদ্যোক্তা, দক্ষতা উন্নয়নকেন্দ্র ও আবাসিক হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ওই বছরের ২৯ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তরটির ফলক উন্মোচন করেন তৎকালীন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এর বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিওসিসিআই)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো প্রবাল ইঞ্জিনিয়ার্স। এ পর্যন্ত নির্মাণাধীন ভবনের আটতলা অবকাঠামো নির্মিত হলেও এবং জানালার গ্রিল, দরজার চৌকাঠ, টয়লেটের সরঞ্জাম লাগানো হলেও দরজা ও জানালার পাল্লা লাগানো হয়নি।
ভবনের পাশের মুদিদোকানি ভুট্টো পাল বলেন, ওই ভবনে দিনে-রাতে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ। তারা খুবই উচ্ছৃঙ্খল। কেউ তাদের নামও বলতে সাহস করে না। বিভিন্ন সময় এখানে এ ধরনের হামলাসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে থানায় জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
ঠিকাদারের নিয়োগ করা তত্ত্বাবধায়ক নবীন খান বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমি এখানে আছি। আমি এসেও ওই সব ভাঙা পেয়েছি। মাঝেমধ্যে আটতলা ভবনের নিচের একটি দরজায় লাগানো তালাও কে বা কারা ভেঙে ফেলে।’
বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, মাদকসেবীদের আড্ডার বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
মেসার্স প্রবাল ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আমিনুল হক বলেন, ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। পরবর্তী সময়ে ‘নো কস্ট এক্সটেনশন’ শর্তে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ কাজের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে ৯ কোটি ২৫ লাখ ৫০৬ টাকায় চুক্তি হয়। সিংহভাগ কাজ হলেও এ পর্যন্ত তাঁকে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ টাকা দেওয়া হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক প্রকল্পের সব অর্থ ছাড় না হওয়ায় নিজের অর্থ ব্যয় করেও তিনি প্রকল্পের কাজ চলমান রাখেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অর্থসংকটের কারণে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক ও এ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক শাহনওয়াজ দিলরুবা খান জানান, বিলম্বে কাজ শুরু, অর্থের ঘাটতি, একাধিকবার প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এবং প্রকল্পের বরাদ্দের সব টাকা ব্যয় করা যায়নি, তাই ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থের জন্য পিপিএনবি (চাহিদাপত্র) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু তার অনুমোদন হয়নি। তখন অসমাপ্ত রেখেই এর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে জামানত ও বকেয়া বিলের জন্য ঠিকাদারের উকিল নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জুনের দাপ্তরিকভাবে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব থেকেও তিনি অব্যাহতিপ্রাপ্ত হন। ফলে এ ব্যাপারে তাঁর করণীয় কিছু না থাকা সত্ত্বেও তিনি বারবার পত্র পাচ্ছেন। তাই তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে পত্র দেন।
বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিডব্লিওসিসিআই) চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা-২ আসনের সাংসদ সেলিমা আহমদ বলেন, ‘এ প্রকল্পে আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কাজ সম্পন্ন করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রীকেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থসচিব আমাকে কথা দিয়েছেন, শিগগিরই এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হবে।’