অভিযোগ দেওয়ায় উত্ত্যক্তকারীর সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব
সিলেটে পাত্র সম্প্রদায়ের একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। তাঁর পরিবারের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে মেয়েটির পরিবার পড়েছে আরও বিব্রতকর অবস্থায়। ছেলেটির বাবা উল্টো মেয়েকে তাঁর ছেলের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেয়েটির বাবা।
মেয়েটি সিলেট মহানগরের শাহপরান এলাকার বাসিন্দা। এলাকাটি পাত্র সম্প্রদায় অধ্যুষিত। মেয়েটির বাবা প্রথমে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একটি সংগঠনকে বিষয়টি জানান। তাদের সহায়তায় বুধবার দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনারকে ঘটনাটি অবহিত করেন। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বিকেলে শাহপরান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অভিযোগটি সত্য হলে ঘটনাটি এককথায় ভয়ংকর। সেটি মামলা হিসেবে নেওয়ার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাত্র পরিবারটির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তাদের দিকে নজর রাখতে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে বলা হয়েছে।
লিখত অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন জুবায়ের আহমদ (২২)। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় বন্ধ হলে মেয়েটি যেন স্বস্তি পায়। এর মধ্যে গত ১৯ আগস্ট মেয়েটি জন্মনিবন্ধন সনদ ফটোকপি করতে বাড়ির বাইরে যায়। এ সময় তার কাছ থেকে জন্মনিবন্ধনের সনদটি কেড়ে নেন জুবায়ের। ওই দিনই জুবায়েরের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এরপর জুবায়েরের বাবা এক সপ্তাহ ধরে তাঁর ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দিতে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
মেয়েটির বাবা বলেন, তিনি একটি সিরামিক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। একই কারখানার নৈশপ্রহরী জুবায়েরের বাবা ফয়জুর রহমান। জন্মনিবন্ধনের সনদ কেড়ে নেওয়ার ঘটনাটি তাঁকে জানান তিনি। তখন ফয়জুর পাত্র সম্প্রদায় নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। পরে মেয়েকে তাঁর ছেলের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
ভিন্ন সম্প্রদায়ের হওয়ায় মেয়েটির বাবা ওই প্রস্তাবে আপত্তি জানান। তাতেও কর্ণপাত করেননি ফয়জুর। এ অবস্থায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে প্রতিকার চান মেয়েটির বাবা। তাঁদের সহায়তায় তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর পরামর্শে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফয়জুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
'পাসকপ' সিলেটের নির্বাহী পরিচালক গৌরাঙ্গ পাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম ঘটনা এই জনজাতির মধ্যে অতীতে শোনা যায়নি। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসহ নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছি।’ পুলিশ তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।