যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে
বাড়ছে কার্ড, লেনদেনে রেকর্ড
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরছে মানুষ। তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে কার্ডের লেনদেন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার পর সব ধরনের কার্ড ও অনলাইন লেনদেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। শুধু ফিরে আসেনি, যেকোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে এখন কার্ডে। গ্রাহকেরা এটিএম থেকে বেশি টাকা তুলছেন, ক্রেডিট কার্ডেও ভালো খরচ করছেন। ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিনে (সিআরএম) রেকর্ড টাকা লেনদেন হচ্ছে। পয়েন্ট অব সেলসের (পিওএস) মাধ্যমে কেনা কাটায়ও হয়েছে রেকর্ড। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে ই-কমার্স লেনদেন কমে গেছে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখনো দেশের বড় অংশের মানুষের ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমেও প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা আর্থিক খাতের মোট লেনদেনের তুলনায় হয়তো সামান্যই। তবে দিনকে দিন কার্ডে লেনদেন বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার ১৬৪। ২০১৯ সাল শেষে ব্যাংক খাতে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার ৯৩। সেই হিসাবে ১ বছর ৯ মাসে কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬০ লাখ। একইভাবে সেপ্টেম্বর শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ১২৩। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ২০২। ফলে ১ বছর ৯ মাসে ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এর আগে কখনো ডেবিট কার্ডে এক মাসে এত লেনদেন হয়নি। এর আগে গত মে মাসে ২২ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। যদিও গত জুনে ক্রেডিট কার্ডে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল।
জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ কমে আসায় জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। আবার অর্থনীতির কর্মচাঞ্চল্যও ফিরে এসেছে। তাই মানুষ খরচও বেশি করছে। এখন আর্থিক লেনদেনে এটিএম, পিওএস, সিআরএমসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের কার্ডে লেনদেন বেড়েছে।’
ব্যাংকাররা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে ই-কমার্সে লেনদেন অনেক কমে গেছে। সেটি না হলে কার্ডে লেনদেন আরও অনেক বাড়ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেই তথ্যও পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে। গত সেপ্টেম্বরে ই-কমার্সে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৭৮ কোটি টাকা। গত জুনেও ই-কমার্স লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।
কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে গত সেপ্টেম্বরে ১৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়, যা নতুন রেকর্ড। একইভাবে পিওএসের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। পিওএস সাধারণত কেনাকাটা, বিমানের টিকিট ক্রয়, হোটেলের ভাড়া দেওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়।
ব্যাংকগুলো তাদের শাখায় চাপ কমাতে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম স্থাপনে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। ফলে গত সেপ্টেম্বর শেষে এটিএম বুথ বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৪৯৫টি, যা ২০১৯ সালের শেষে ছিল ১০ হাজার ৯২৪। পিওএসের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৮ হাজার ৫২৭, যা ২০১৯ সাল শেষে ছিল ৫৬ হাজার ১৩। পাশাপাশি টাকা জমা নিতে ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৮৯টি এবং সিআরএম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৪টি। গ্রাহকেরা এখন কম অঙ্কের টাকা জমা দিতে ব্যাংক শাখার চেয়ে যন্ত্রকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে অ্যামেক্সের সেবা দিয়ে ক্রেডিট কার্ড সেবায় শীর্ষে রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের প্রণোদনা ঋণ ও টিকার কারণে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ আবার আগের মতো চলাচল ও খরচ করতে শুরু করেছে। কার্ডভিত্তিক লেনদেনের তথ্য থেকে সেটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। গ্রাহকদের খরচে আকৃষ্ট করতে আমরাও ক্রেডিট কার্ডে নানা অফার দিচ্ছি।’