কক্সবাজারে ধর্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত নারী আর মার্কিন পুরষ্কার নিয়ে প্রশ্ন

ছবির উৎস, coldsnowstorm
- Author, সাবির মুস্তাফা
- Role, সম্পাদক, বিবিসি নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের একটি ঘটনা সারা দেশকে হতভম্ব করে দিয়েছে। প্রকাশ্যে একজন নারী পর্যটককে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় যুবক ধর্ষণ করেছে। একই সাথে তার স্বামী আর শিশু সন্তানকে জিম্মি করা হয়।
সে বিষয় দিয়েএ সপ্তাহের কলাম শুরু করছি। লিখেছেন সাতক্ষীরার তালা থেকে শামীমা আক্তার লিপি:
''কক্সবাজারে ঘটে যাওয়া ধর্ষণে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মানুষ কোনভাবে বুঝতে পারল না একজন নারী অপহৃত হচ্ছে, এটা কেমন দায়িত্ব পালন?
''দ্বিতীয়ত, ধর্ষণের সাথে জড়িতরা সৈকত এলাকার বাজার থেকে মানুষের সামনে দিয়ে একজন নারীকে ধরে নিয়ে গেল। ওই নারী বাঁচার চেষ্টায় কোন চিৎকার করেননি বা কেউ এগিয়ে আসেন নি?
''দুটি প্রশ্নের সম্ভাব্য কোন উত্তর বিবিসির এ সংক্রান্ত রিপোর্টে ছিল না। তাহলে এই ধরণের একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কেন দায় সারা রিপোর্ট বিবিসি দিল?''
আপনি ঠিকই বলেছেন মিস আক্তার, আপনার প্রশ্ন দুটোর উত্তর আমাদের প্রাথমিক রিপোর্টে ছিল না। এর কারণ হচ্ছে, এ'ধরনের তথ্য সংগ্রহ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া, কক্সবাজারে বিবিসির নিজস্ব কোন রিপোর্টার নেই।
তবে আপনি নিশ্চিত থাকবেন, এই ঘটনাকে আমরা মোটেই দায় সারা ভাবে নিচ্ছি না। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, যার মধ্যে সোমবারের টেলিভিশন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ #trending ও থাকবে, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে।
আরো পড়ুন:

ছবির উৎস, Future Publishing
বিশ্ববিদ্যালয় হলে বৈষম্য
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে বিবাহিত বা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের থাকার অধিকার নিয়ে লিখেছেন সাভার সরকারি কলেজ থেকে মনিরুল হক রনি:
''সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে আসন বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালায় বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। আমার প্রশ্ন হল -বাংলাদেশে কি বিবাহিত মেয়েদের লেখাপড়া করা নিষিদ্ধ?
''যদি না হয়ে থাকে, তবে তাদের হলে থাকার ক্ষেত্রে এমন নিষেধাজ্ঞা কেন? যেখানে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারী শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন উদ্ভট ও অবান্তর সিদ্ধান্ত নারী ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম অন্তরায় নয় কি? এহেন সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সরে আসা উচিৎ।''
এই বিধি-নিষেধ কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষ আরোপ করে নি মিঃ হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় এরকম কোন নিষেধাজ্ঞা কখনোই ছিল না। কিন্তু ১৯৫৬ সালে রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যেটা পরবর্তীতে অন্যান্য হলগুলো অনুসরণ করে।
তবে হ্যাঁ, ২০২১ সালে এসে এ'ধরনের উদ্ভট নিয়ম এখনো বহাল আছে দেখে আপনার মত অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন। আপনি নিশ্চয়ই খবরে দেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখা যাক তারা কত দ্রুত এরকম বৈষম্যমূলক নীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে।
আরো পড়ুন:

ছবির উৎস, NurPhoto
আবাসিক হলে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব
একই বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মাহবুবা ফেরদৌসি হ্যাপি:
''আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলাম। আমাদের সময়েও এ নিয়মের কথা শুনেছি কিন্তু প্রয়োগ দেখিনি। যারা এই নিয়ম বাতিলের পক্ষে, তাঁদের একটি যুক্তি হচ্ছে, নিয়মটি বৈষম্যমূলক। কারণ, ছাত্রদের হলে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নই করা হয় না।
''তারা আরো বলেন, এটি সুশাসনেরও প্রশ্ন। যেখানে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেত্রীরা ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়ে হলে থাকেন, সেখানে বিবাহিত ছাত্রীদের বের করে দেওয়া কেন?
''সরকার যেখানে নারী শিক্ষার প্রসার এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য ইতিবাচক ভাবে কাজ করছে, সেখানে পাকিস্তান আমলের একটি সেকেলে ও বৈষম্যমূলক নিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আবাসিক হলে চালু রাখা কতটা যৌক্তিক?''
এ'ধরনের বৈষম্যমূলক নিয়ম কোন সময়ে, কোন সামাজিক প্রেক্ষাপটেই যৌক্তিক হতে পারে না মিস ফেরদৌসি। অনেকে ১৯৫৬ সালের সামাজিক বাস্তবতার কথা বলেন। কিন্তু সেই বাস্তবতায় শুধু বিবাহিত নারীদের কেন আবাসিক হল নিষিদ্ধ করা হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
যেটা ২০২১ সালে বৈষম্যমূলক, সেটা ১৯৫৬ সালেও বৈষম্যমূলক ছিল। তবে এই নিয়ম নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখন ধারণা করা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিয়ম বদলানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
বিবিসি বাংলায় আরো খবর:

ছবির উৎস, Getty Images
সার্জেন্ট মহুয়া হাজং
বাংলাদেশে বৈষম্য আসে নানা ক্ষেত্রে, নানা বেশে, এমনকি পুলিশ সদস্যরাও তা থেকে রেহাই পান না। যেটা বুঝতে পেরেছেন সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। সে বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, যদিও তিনি বিবিসিকে জড়িয়েই প্রশ্নটি করেছেন:
''গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং এর দায়ের করা মামলা না নেয়ার খবরটি পড়ে খুবই অবাক ও বিস্মিত হলাম। অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ার কারণে একজন পুলিশ সার্জেন্ট যেখানে থানায় গেলেও পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি, সেখানে একজন সাধারণ নাগরিকদের কী অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
''বিবিসি বাংলার খবরে বলা হলো উপরোক্ত দুর্ঘটনার জন্য একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। তাহলে বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও কি এ প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে? প্রভাবশালী মহলের কাছে আইন আদালত পুলিশের মতো গণমাধ্যমও কি তাহলে অসহায়? আমার প্রশ্ন তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের নাম পরিচয় প্রকাশের দায়িত্ব কার?''
নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসির একটি বড় বাধা আছে ঠিকই মিঃ রহমান। আর তা হল মানহানির সম্ভাবনা। বিবিসির নীতিমালা অনুযায়ী আমরা এমন কিছু করতে পারি না যাতে কারো মানহানি হয়।
যখন কারো বিরুদ্ধে কোন গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আসে, তখন আমাদের দেখতে হয় অভিযুক্তকে পুলিশ শনাক্ত করেছে কি না, তার নাম কোন মামলায় নথিভুক্ত করা হয়েছে কি না, অথবা অভিযুক্ত নিজে এগিয়ে এসে কোন বিবৃতি দিয়েছে কি না।
সার্জেন্ট হাজং এর পিতা যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, সেখানে গাড়িচালকের নাম নিশ্চিত করা হয় নি। বলা হচ্ছে তার পিতা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ষোলই ডিসেম্বর আমাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে মামলায় অভিযুক্তর নাম নেই।
সার্জেন্ট মহুয়া হাজং বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও অভিযুক্তর নাম বলেন নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি যে প্রভাবশালী এবং সেকারণেই যে সার্জেন্ট হাজং মামলা করতে পারছেন না, সে কথা আমাদের রিপোর্টে পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত না হয়ে কারো নাম বিবিসি প্রকাশ করে না, কারণ প্রকাশ করাটা মানহানির বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ছবির উৎস, US State Department/RFI
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে শুধু দেশের ভেতরে নয়, পররাষ্ট্র সম্পর্কেও তার প্রভাব পড়তে পারে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেখক অভিজিত রায় হত্যার দায়ে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত, কিন্তু পলাতক দু'জন সম্পর্কে তথ্য দেয়ার জন্য ৫০ লক্ষ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।
কিন্তু বিষয়টি মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না বগুড়ার শেরপুর থেকে সম্পদ কুমার পোদ্দার:
''বহুল আলোচিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেছে আমেরিকা। ন্যক্কার জনক হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাটি ঘটেছিল বাংলাদেশে। তাই বিচারও হবে বাংলাদেশের আইনে।
''কিন্তু বাংলাদেশের সাথে কোনও প্রকার আলোচনা ছাড়াই আমেরিকা এ পুরষ্কার ঘোষণা করে অযথা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপ করলো। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে এরকম অযাচিত হস্তক্ষেপ মোটেও কাম্য নয়। নাকি এটা আমেরিকার বিশ্ব মোড়লিকরনের কূটনৈতিক মেরুকরণ?''
যে দু''জনের ব্যাপারে আমেরিকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছে, সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আর আকরাম হোসেন, তাদের বিচার তো ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আদালতেই হয়ে গেছে মিঃ পোদ্দার। বাংলাদেশের পুলিশের তদন্তের ফলাফল এবং আদালতের রায় মেনেই আমেরিকা এই পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।
তাহলে তারা বাংলাদেশের বিচার কর্মে হস্তক্ষেপ করছে, এ'কথা বলা কি ঠিক হবে? আমার তো তা মনে হয় না।
কিন্তু হ্যাঁ, এই পুরষ্কার ঘোষণার মাধ্যমে তারা এই দু'জনকে গ্রেফতার করতে পুলিশের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে। অভিজিৎ রায় যেহেতু মার্কিন নাগরিক ছিলেন, তাই যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে তার হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে তাদের সহায়তা করার অধিকার আছে।
আমেরিকার প্রসঙ্গে যখন আছি তখন তাদের আরেকটি কাজ সংক্রান্ত একটি চিঠি নেয়া যাক।

ছবির উৎস, Getty Images
র্যাব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে?
গত সপ্তাহে সব আলোচিত খবর ছিল বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ বাহিনী র্যাব এবং তার ছ'জন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। সে বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শামীম উদ্দিন শ্যামল:
''র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এদিকে সরকারও একবাক্যে এটিকে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা হিসেবে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় সরকার একবারও ভাবছেনা র্যাব নিয়ে মানুষের যে অভিযোগ আছে তা একেবারেই কাল্পনিক না।
''ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেনের পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যু এবং র্যাবের পরিচয়ে গুম-হত্যা এগুলো কি নিতান্তই অভিযোগ?
''ধরেই নিলাম মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক কৌশল মাত্র, কিন্তু এতসব অভিযোগের বিষয় গুরুত্ব দিয়ে কি সরকার একবারও র্যাব নিয়ে ভাববেন না? আমার মতে র্যাব নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে।''
আপনার সাথে অনেকেই একমত হবেন মিঃ শামীম উদ্দিন। র্যাবের কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করার সময় অনেক আগেই হয়েছিল।
সমস্যা হচ্ছে, সরকার হয়তো চায়না এরকম একটি নিপীড়নমূলক হাতিয়ার হাতছাড়া করতে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনো র্যাবের কার্যক্রম নীরবে সমর্থন করে। তাদের মত হচ্ছে, অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনের জন্য র্যাবের মত একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রয়োজন।
হয়তো সে কথা ঠিক, কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আর রাজনৈতিক বা আইন-শৃঙ্খলা জনিত কারণে মানুষকে গুম করে দেয়ার নীতিই কি আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার উপযুক্ত পথ? দুটোই তো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
আরো পড়ুন:

ছবির উৎস, Getty Images
অবকাঠামোর তত্ত্বাবধানে সামরিক বাহিনী?
র্যাবের অধিকাংশ অফিসারই আসনে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা থেকে। তাদেরকে অনেকে দুর্নীতি-মুক্ত কার্যকরী ব্যবস্থাপক হিসেবে দেখেন। যেমন লিখেছেন মাগুরার জোত-শ্রীপুর থেকে রিপন বিশ্বাস:
''বাংলাদেশে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু এবং মেট্রো রেল নিয়ে আমি আশঙ্কিত কেননা এই দুটি মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমার মত অনেক সাধারণ মানুষের মনেই এই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের দিন থেকে কতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় চলমান থাকবে।
''আমার মতামত হলো, এই দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যেন তার তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব যথাক্রমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল এর প্রকল্পে বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে একটি কন্টিজেন্ট নিয়োজিত আছে যা প্রশংসিত।''
আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি মিঃ বিশ্বাস, বাংলাদেশে নানা ধরনের প্রকল্পে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণে, সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা। বেশ কিছু অবকাঠামোর ত্বত্তাবধায়নেও সামরিক বাহিনীকে দেখা যায়।
হয়তো বেসামরিক কাজে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার প্রয়োজন আছে, কিন্তু এটা নিয়ে বিতর্কও আছে। অনেকে আশংকা করেন এভাবে চলতে থাকলে সামরিক বাহিনী একটি বাণিজ্যিক সংস্থায় পরিণত হবে।
এবারে আসি ভিন্ন বিষয়ে।

ছবির উৎস, Getty Images
শিক্ষা খাতের ভবিষ্যৎ কী?
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষা অঙ্গনে যে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে রোমানা আক্তার শিউলি:
''বিবিসি বাংলায় ২২শে ডিসেম্বর পরিক্রমায় করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন শুনে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে আগামীর দশ বছরেও কি এই শিক্ষা ঘাটতি পূরণ হবে?
''এখন শুনছি আগামী বছরেও সংক্ষিপ্ত পরিসরে চলবে শিক্ষা কার্যক্রম। তাহলে আমরা কোন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?''
জটিল প্রশ্ন করেছেন মিস রোমানা আক্তার। আকবর হোসেনের রিপোর্টে বোঝা গেল, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ক্ষতিটা পূরণ করা কঠিন হবে।
অনেক ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যেই ঝরে পড়েছে, অনেক মেয়েকে তাদের বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তারা ফেরার পথ পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকবে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশ সরকারকে একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে যাতে এই দু'বছর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতি স্থায়ী না হয়।

ছবির উৎস, Getty Images
গরুরও সার্টিফিকেট লাগে?
রাজশাহী জেলায় গরু-মহিষের নিবন্ধন নিয়ে লিখেছেন ঠাকুরগাঁও এর বালিয়াডাঙ্গী থেকে রিপন চন্দ্র সিংহ:
''গত ১৯ তারিখ রাজশাহী জেলার সকল গরু মহিষকে সার্বক্ষণিক ভাবে নিবন্ধিত রাখার উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদনটি শুনে খুব খারাপ লাগল। মানুষ গরু,মহিষ পালন করে কৃষিকাজের জন্য,দুধ পাওয়ার জন্য কিংবা শখের বশে। তাছাড়া বর্তমানে কেউ কেউ মুনাফা লাভের জন্য উদ্যোক্তা হিসেবেও গরু মহিষ পালন করে।
''কিন্তু কারো যদি গরু,মহিষ,বাছুর থাকে,যদি কোন পশু হাট থেকে কিনে আনেন,কারো কোন পশু যদি বাচ্চা জন্ম দেয়,কোন পশু কেউ যদি বিক্রি করতে চান, এর প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদেরকে নিবন্ধন করতে হয়। তাও আবার ইউনিয়ন পরিষদ ও বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে। এই জটিল প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কতটুকু যৌক্তিক?''
প্রক্রিয়াটি যে জটিল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই মিঃ সিংহ। প্রক্রিয়া যখন জটিল হয়, তখন যে শুধু সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন, তাই নয়।
এ'ধরনের প্রক্রিয়া দুর্নীতির দরজা খুলে দেয়, মানুষ বাধ্য হয় ঘুষ দিয়ে কাজ সারিয়ে নিতে। তাই মানুষের জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যত সহজ করা যাবে, তত দুর্নীতির সুযোগ কমবে, মানুষের ব্যবসায়িক সাফল্য বাড়বে।

ছবির উৎস, Getty Images
প্রশংসা আর সমালোচনা
এবারে বিবিসি বাংলা নিয়ে কয়েকটি চিঠি, প্রথমে লিখেছেন রংপুরের লালবাগ থেকে মোহাম্মদ মহসীন আলী:
''বিবিসি বাংলা থেকে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে আমারা শ্রোতারা বিভিন্ন সময় প্রশংসা, মতামত প্রদান, পরামর্শ বা সমালোচনা করে থাকি।
''অনেক সময় অনুষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক বা ইতিবাচক সমালোচনা করে চিঠি লিখি। যার মধ্যে কিছু কিছু শ্রোতার মতামতের সাথে সম্পাদক একমত পোষণ করেন, আবার কিছু কিছু মতামতের সাথে দ্বিমতও পোষণ করেন। এটাই স্বাভাবিক।
''এখন প্রশ্ন হল, শ্রোতাদের যে সব মতামত বা প্রস্তাবের সাথে সম্পাদক একমত পোষণ করেন সেগুলো কি পরবর্তীতে অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় বা প্রতিবেদন তৈরিতে বিবেচনা করা হয়? অথবা মতামতটি গৃহীত হলে অনুষ্ঠানে তার বাস্তবায়ন কত দিন পরে হয় এবং শোনা যায়?''
ভাল প্রশ্ন করেছেন মিঃ আলী। শ্রোতা-পাঠকের সমালোচনা এবং প্রশংসা, দুটোই আমরা স্বাগত জানাই। প্রশংসা শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু সমালোচনাও আমরা গুরুত্বের সাথে নেই। বিশেষ যেসব সমালোচনা গঠনমূলক হয়।
যখন কোন সমালোচনা আমি গ্রহণ করি তখন অবশ্যই সেটা নিয়ে আমার সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করি, তাদের মতামত নেই, কীভাবে আমাদের কাজ আরো ভাল করতে পারি, তা নিয়ে পথ বের করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু তারপরও ভুল হয়, কারণ মানুষ মাত্রই ভুল করে।
আর অনুষ্ঠান সম্পর্কে যেসব প্রস্তাব পত্র লেখকরা দেন, সেগুলো গ্রহণ করা বা না করা এখানে মুখ্য নয়। আমি সব প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই কিন্তু কখনো নির্দিষ্ট কোন তারিখের মধ্যে সেটা বাস্তবায়ন করার অঙ্গিকার আমি করি না।
কে ভাল দেশ শাসন করেছে?
প্রস্তাবের যে কথা বলছিলেন মিঃ আলী, ঠিক সেরকমই একটি প্রস্তাব দিয়ে লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:
''বিবিসি বাংলা'র ওয়েবসাইটে কয়েকদিন আগে দেখলাম, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে যারা সরকার প্রধান ছিলেন, তাদের একটা তালিকা। সেখানে পড়লাম তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন।
''এই পঞ্চাশ বছরে তাদের কার কী অবদান ছিল? কার আমলে দেশ কতটা নিরাপদ ছিল, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ছিল কি-না এবং সুশাসন দিতে পেরেছে কতটুকু, এগুলো নিয়ে একটা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচার করার জন্য বিবিসি বাংলা'র প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।''
প্রস্তাবটা মন্দ না মিঃ ইসলাম। বিষয়টি আমরা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখবো। তবে আগের চিঠির জবাবে যা বলছিলাম, আপনার প্রস্তাবকে আমি স্বাগত জানালেও এ'ধরনের একটি ধারাবাহিক কবে নাগাদ প্রচার করা যাবে, তা নিয়ে কোন অঙ্গিকার করা সম্ভব না।
পঞ্চাশে বাংলাদেশ
আমাদের সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিকটি নিয়েই লিখেছেন সাতক্ষীরা সদর থেকে অনিবেশ কুমার সানা:
''পঞ্চাশে বাংলাদেশ নামে যে ধারাবাহিক পরিবেশিত হয়েছে, তা খুব ভালো লেগেছে। সব গুলো পর্ব ভাল লেগেছে, বিশেষ করে ১২ই ডিসেম্বর পরিবেশিত, খাদ্যে উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্যর পর্বটি।
''অনেক অজানা কথা জানতে পারলাম। ময়মনসিংহের রশিদা বেগম যেমনটি বলছিলেন, আমিও আমার বাবার মুখ থেকে শুনেছি, আগের সেই দিনের অভাব এবং খাদ্য সংকটের কথা।
''শোনার সময় মনে হচ্ছিল বাবার মুখের কথা গুলোই আবার শুনছি অন্য কারো মুখে। অসংখ্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলাকে।''
আপনাকেও ধন্যবাদ মিঃ সানা, অনুষ্ঠান শোনার জন্য এবং চিঠি লেখার জন্য। আপনার শুভেচ্ছা আমি ধারাবাহিকের প্রযোজক এবং প্রতিবেদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে পৌঁছে দেব।
এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:
মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সৈয়দপুর, নীলফামারী
গাজী মোমিন উদ্দিন, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, কপিলমুনি, খুলনা।
মুহাম্মদ মাসুদুল হক মাশুক, চরফ্যাশন, ভোলা।
মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, কাউনিয়া, বরিশাল।
মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পী, কপিলমুনি, খুলনা ।
শহীদুল ইসলাম, তালগাছিয়া, ঝালকাঠি।